গাজার নিরাপত্তা ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ আপাতত নিজেদের হাতেই রাখতে চায় হামাস। সংগঠনটির রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য মোহাম্মদ নাজ্জাল জানিয়েছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সময়েও তারা নিরাপত্তা ছাড়তে পারবে না এবং এখনই নিরস্ত্র হওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিতে রাজি নয়। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধ সমাপ্তির যে পরিকল্পনা এগোচ্ছিল, তাতে নতুন জটিলতা দেখা দিয়েছে।
দোহা থেকে এক সাক্ষাৎকারে নাজ্জাল বলেন, “গাজা পুনর্গঠনের জন্য আমরা পাঁচ বছর পর্যন্ত যুদ্ধবিরতিতে যেতে প্রস্তুত। তবে ভবিষ্যৎ নিয়ে নিশ্চিততা থাকতে হবে। ফিলিস্তিনিদের স্বাধীন রাষ্ট্রের আশার আলো দেখাতে হবে।”
সম্প্রতি গাজায় প্রকাশ্যে অপরাধীদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি একে ‘যুদ্ধকালীন বিশেষ পরিস্থিতি’ হিসেবে উল্লেখ করেন। নাজ্জালের এই বক্তব্য আসে এমন এক সময়ে, যখন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। তবে এতে হামাসের অবস্থান ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরিকল্পনার মধ্যে স্পষ্ট পার্থক্য ফুটে উঠেছে।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, হামাসকে প্রথম ধাপেই সব জিম্মিকে মুক্তি দিতে হবে। কিন্তু তারা তা করেনি। বরং হামাস জানে জিম্মিদের লাশ কোথায় আছে এবং তাদের নিরস্ত্র হওয়ার শর্তও মানতে হবে। ২৯ সেপ্টেম্বর ঘোষিত ট্রাম্পের পরিকল্পনা অনুযায়ী, জিম্মি মুক্তির পর হামাসকে নিরস্ত্র হয়ে গাজার প্রশাসনিক দায়িত্ব একটি আন্তর্জাতিক তত্ত্বাবধানে পরিচালিত টেকনোক্র্যাট কমিটির হাতে তুলে দিতে হবে। পরিকল্পনাটিকে সমর্থন করেছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তার মতে, এতে হামাসের সামরিক সক্ষমতা ও রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণের অবসান ঘটবে এবং গাজা আর ইসরায়েলের জন্য হুমকি হয়ে থাকবে না।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ইসরায়েলে ১ হাজার ২০০ জন নিহত ও ২৫১ জন জিম্মি হন। এর পাল্টা ইসরায়েলি হামলায় গাজায় প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় ৬৮ হাজার মানুষ। হামাস কি অস্ত্র ছাড়বে—এমন প্রশ্নে নাজ্জাল বলেন, “এটার সহজ উত্তর নেই। নিরস্ত্র মানে কী? অস্ত্রগুলো কার হাতে যাবে? এই আলোচনায় শুধু হামাস নয়, অন্যান্য ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীকেও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।”
ওয়াশিংটনে ট্রাম্প সাংবাদিকদের জানান, হামাস থেকে প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে এবং তারা সেটি রক্ষা করবে বলে আশা করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, কিছু মৃতদেহ ইতিমধ্যে ফেরত দেওয়া হয়েছে, তবে নিরস্ত্রীকরণ নিয়ে এখনো বিস্তারিত কিছু বলা হয়নি। নাজ্জাল দাবি করেন, হামাসের কাছে নিহত জিম্মিদের লাশ রাখার কোনো আগ্রহ নেই। তারা ২৮টি মৃতদেহের মধ্যে অন্তত ৯টি হস্তান্তর করেছে, বাকি লাশ উদ্ধারে প্রযুক্তিগত জটিলতা হচ্ছে। তুরস্ক জানিয়েছে, ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ও মিসরকে সঙ্গে নিয়ে তারা মৃতদেহ উদ্ধারে যৌথ টাস্কফোর্সে যোগ দেবে।
ট্রাম্প বলেছেন, হামাসকে নিরস্ত্র হতে হবে, না হলে তাদের বাধ্য করা হবে। তবে সাময়িকভাবে গাজার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা রক্ষায় হামাসকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। নাজ্জালের মতে, “এটা কেবল অন্তর্বর্তীকালীন পরিস্থিতি। টেকনোক্র্যাট প্রশাসন বেসামরিক দায়িত্বে থাকবে, কিন্তু মাঠপর্যায়ে নিরাপত্তা ও সহায়তায় হামাস উপস্থিত থাকবে।” তিনি মনে করেন, যুদ্ধোত্তর এই পর্যায় শেষে নির্বাচন হওয়া উচিত। তবে আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।
হামাসের ঘোষিত সনদে ইসরায়েল ধ্বংসের লক্ষ্য থাকলেও নাজ্জাল দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় তারা দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছে। তিনি বলেন, “আমরা অন্তত তিন থেকে পাঁচ বছরের জন্য যুদ্ধবিরতি চাই। লক্ষ্য নতুন যুদ্ধ নয়, বরং গাজা পুনর্গঠন। তবে এর পরবর্তী সময়ের নিশ্চয়তার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ফিলিস্তিনিদের স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথ দেখাতে হবে।”